মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে জমে উঠেছে ঈদ বাজার  ক্রেতা প্রতারিত হচ্ছেন ‘একদর’ দোকানে 

বিশেষ প্রতিবেদক,চাঁদপুর 


পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চাঁদপুরের আট উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে জমতে শুরু করেছে  ঈদের কেনাকাটা। দিন গড়ানোর সাথে সাথে ক্রেতা সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠছে ছোট-বড় হাট বাজারের  দোকান, শপিংমল, মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো। পরিবার পরিজন  বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই আসছেন  বিভিন্ন বাজারগুলোতে ঈদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক পণ্য কিনতে। ক্রেতা আকর্ষণে নানা কৌশলে পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রাধান্য পাচ্ছে পরিবারের ছোট সদস্যদের ঈদ কেনাকাটাও। পোশাকের পাশাপাশি জুতা, কসমেটিকস ও জুয়েলারি দোকানগুলোতেও  বেড়েছে ভীড়। গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি এবং হালকা রঙের পোশাককেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা। রুচিসম্মত পণ্য কিনতে এক শপিংমল থেকে অন্য শপিংমলে ঘুরছেন অনেকেই। সামনে বিকিকিনি আরও বাড়ার পাশাপাশি ভালো ব্যবসা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিক্রেতারা।
চাঁদপুর শহরের মীর শপিং,ফসসাল শপিং কমপ্লেক্স,  পূরবী মার্কেট, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। তবে ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা তেমন চোখে পড়েনি।  বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে,অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মার্কেটে এসেছেন। পরিবারের ছোট বড় সবার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে ঈদ কেনাকাটা করছেন তারা। রেলওয়ে হকার্স  মার্কেটের আল মদিনা কালেকশনের মোঃ খলিলুর রহমান জানান,গত বছরের তুলনায় এ বছর বেছাবিক্রি অনেক কম। একই মার্কেটের অপর এক   কাপড়  ব্যবসায়ী  জানালেন পনের রমজানের পর থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন কিছুটা বিক্রি বেড়েছে। বেলা ১১টার পর থেকেই দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আগমন বাড়লেও অসহ্য গরমের কারণে এখন সন্ধ্যার পর ক্রেতা সমাগম বাড়ছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার পৌর হকার্স মার্কেট, পৌর বিপনী বিতান, হাজীগঞ্জ প্লাজা,বিজনেস পার্ক,সান্ত্বনা সুপার মার্কেট,মসজিদ মার্কেট,রয়েল মার্কেট  কাপড়িয়া পট্টির দোকানগুলোতে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। কাপড়িয়া পট্টির সুপরিচিত হাজীগঞ্জ বস্ত্রালয় ও এমা ফ্যাশনে দাম ও মানের সামঞ্জস্য থাকায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।অন্যন্য দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে তবে তা তুলনামূলক কম।
হাজীগঞ্জ বস্ত্রালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মিঠু সাহা ক্রাইম রিপোর্ট কে বলেন, ব্যবসা একদিনের জন্য নয়।ট্যাগে বেশি মূল্য সাঁটিয়ে ব্যবসা করিনা যা অনেকেই করে আসছে।এতে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। পণ্যের দাম ও মানের সামঞ্জস্য রেখেই বিক্রি করছি। দোকানে বেচাবিক্রি ভালো।
 অপরদিকে রাস্তার পাশের দোকানগুলিতে তুলনামূলক দাম বেশি হওয়ায় অযুহাতে অনেকেই কাপড় কিনতে ভীড় জমিয়েছেন পৌর হকার্স মার্কেটে।হাজীগঞ্জ বস্ত্রালয়ে সপরিবারে কাপড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী, ফরিদুল ইসলাম, হাসান মিয়াজী বলেন,পণ্যের দাম ও মানের সাথে মিল রয়েছে।কেনাকাটা করে ভালোই লেগেছে এখানে। অন্তত দশ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
কচুয়া উপজেলার রহিমানগর বাজার,কচুয়া বাজার, সাচার বাজারে ইতোমধ্যে ঈদের কেনাকাটা করতে ভীড় করছে ক্রেতারা। তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রহিমানগর বাজারে কাপড় কিনতে আসা ক্রেতা ইমান হোসেন জানান,ঈদের বাজার জমে উঠেছে।পণ্যের দাম সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।এখানকার কাপড়ও গুনগতমান সম্পন্ন।
শাহরাস্তি উপজেলার কালিয়াপাড়া কালিবাড়ি, ঠাকুর বাজার, দোয়াভাঙা, সূচীপাড়া,শোরশাক বাজার, আয়নাতলী ,খিলা বাজার,চিতোষী বাজার, ওয়ারুক বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে ভীড় করছেন ক্রেতারা। তবে নিন্ম আয়ের মানুষজনই এখানে ক্রেতা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মতলব উপজেলার ছেংগারচর বাজার ও নতুন বাজার এলাকার বিপনীবিতান ও বিভিন্ন  মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের বাড়তি ভীড়। তারা পছন্দের জামাকাপড় কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে দেখছেন। ঈদে নতুন কী পোশাক এসেছে, তা-ও দেখতে এসেছেন অনেকে। ফুটপাতে কেনাকাটা করছেন নিন্ম আয়ের মানুষ।
ঈদকে সমানে রেখে প্রতিটি শোরুম ও বিপণিবিতানে পোশাকের ব্যাপক সমারোহ দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের কালেকশন তারা রেখেছেন। তবে গরমে সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় সুতি কালেকশন বেশি রয়েছে। তবে দাম নিয়ে আপত্তির শেষ নেই ক্রেতাদের। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষরা ঈদ বাজারে এসে দর-কষাকষিতে হাঁপিয়ে উঠছেন। ছেংগারচর বাজারের এশিয়ান ফ্যাশন-এ ঈদের পোষাক কিনতে ব্যস্ত দেখা যায় এক তরুণীকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণী জানিয়েছেন একটা নতুন ডিজাইনের টপস ও থ্রিপিস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও কিনতে হচ্ছে। কারণ ভালোলাগার পোশাক পরাই তো ঈদ আনন্দ।তবে ওই দোকানের মালিক মিন্টু মিয়া বলেন, বেশি দামে পোশাক কিনছি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
রিকশা চালক আনোয়ার হোসেন ছেংগারচর বাজারে কাছে ফুটপাতে তার দুই ছেলের জন্য প্যান্ট ও শার্ট কিনছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “শহরে মেলা রিকশা, আগের মতো কামাই নাই। তারপরও যা কামাই হয় তাক দিয়্যা কোনো রকমে সংসার চলে। ঈদোত ছাওয়াল দুইটাকে কাপড় কিনি দিমু। দামের কারণে মনে হয় আজই কেনা হবার নায়। গতবার ১ হাজার ২০০ টাকাতে দুইজনের কাপড় কিনচু। এবার তো দেড় হাজার টাকাতো কেনা হওছে না।”
 অভিযোগ রয়েছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও বিএসটিআই সংশ্লিষ্টদের বাজার তদারকি না থাকায় ট্যাগে বেশি মূল্য সাঁটিয়ে একদরের দোকানগুলোতে প্রতারণা করা হচ্ছে গ্রাহকদের সাথে।নিজের মর্জিমাফিক পণ্যে দামের ট্যাগ বসিয়ে প্রতারনা করা হলেও এ ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।এমন অভিযোগ হাজীগঞ্জ বাজারের ক্রেতাদের।

Comments are closed.

More News Of This Category